ইতালীতে অভিবাসন প্রত্যাসী এক লাখ দশ হাজার কর্মীর স্বপ্ন ভঙ্গ ও হাজার কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্থ

ইউরোপীয়ান-বাংলাদেশ ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ এবং কর্ম সংস্থানে নতুন দিগন্তের হাতছানি

ইতালী সরকার অনুমোদিত

যাত্রার পূর্বে ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান প্রকল্প

বাংলা ড্রিম প্রকল্পের মাধ্যমে স্বপ্ন যাত্রা শুরু

ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের জনসংখ্যা প্রায় ৪৪৯ মিলিয়ন এবং এর অর্থনৈতিক সূচক অনুযায়ী জিডিপি $19.403 ট্রিলিয়ন। মাথাপিছু জিডিপি $43,194; এর মধ্যে কৃষি 1.7%, শিল্প 23.7%, ও পরিসেবা 65% (২০২৩ সালের আনুমানিক)। কর্মক্ষম জনশক্তি ২৫৬ মিলিয়ন এবং কর্মী ঘাটতি ২.৭% প্রায় ৬.৯১ মিলিয়ন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিডিপি স্থিতিশীলতা প্রদর্শন করেছে, এবং কোভিড-পরবর্তী সময়ে প্রকৃত জিডিপি বৃদ্ধির হার স্থিতিশীল রয়েছে। 2020 সালে 5.6% সংকোচনের পর, 2021 সালে 6.0%, 2022 সালে 3.4%, এবং 2023 সালে 0.5% বৃদ্ধি পায়। জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম অর্থনীতি, বর্তমানে প্রধান শিল্পে শ্রমের ঘাটতি অনুভব করছে, যা এর বৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং ইইউয়ের আন্তঃসংযুক্ত অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জনসংখ্যা দ্রুত বার্ধক্য হচ্ছে, এবং 2030 সালের মধ্যে 25% এরও বেশি বাসিন্দা অবসর গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই জনসংখ্যাগত পরিবর্তন দক্ষ অভিবাসন এবং শ্রমনীতির মাধ্যমে শ্রমশক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিভিন্ন সেক্টরে যেমন স্বাস্থ্যসেবা, টেক্সটাইল, নির্মাণ, পরিবহন, পর্যটন, কৃষি, উৎপাদন শিল্প এবং আইটিতে তীব্র শ্রম ঘাটতির সম্মুখীন। উদাহরণস্বরূপ, জার্মানি, ইতালি ও নেদারল্যান্ডে এসব খাতে গুরুতর ঘাটতি বিদ্যমান, যা স্থানীয় শ্রমবাজারে বৈপরীত্য সৃষ্টি করছে এবং এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাকরির খালি পদের হার কিছুটা কমলেও, দক্ষ কর্মীদের জন্য চাহিদা অপরিবর্তিত রয়েছে। শ্রম বাজারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে উচ্চ শূন্যতার হার নির্দেশ করছে, যা স্থানীয় শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার সাথে কার্যকরভাবে যুক্ত হতে অক্ষম।

অভিবাসী শ্রমিকরা বর্তমানে ইউরোপের কর্মশক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ গঠন করছে। ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রোগ্রামগুলি এই সুযোগগুলোকে উন্নত করতে এবং শ্রম বাজারে বিশেষ শুন্যতা পূরণের জন্য কাঠামোগত ও নিরাপদ অভিবাসনের সুযোগ সৃষ্টি করাকে উৎসাহিত করে। এই প্রোগ্রামটি ইউরোপীয় অর্থনীতিতে অভিবাসী কর্মীদের সফলভাবে সংহত করার জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করছে।

২০২৪ সালে ইতালি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে উচ্চ আয়ের দেশে প্রায় এক কোটি দক্ষ ও উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীর চাহিদা রয়েছে। এই বিশাল শ্রম বাজারে বাংলাদেশকে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে হলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক কাঠামোর দক্ষতা অর্জন করা অপরিহার্য। ইতালি ও ইউরোপীয় সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে আগ্রহী, তবে এটি হতে হবে নিয়ন্ত্রিত ও গতিশীল।
বাংলাদেশ সরকার তার আইনী সংস্কার ও প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পুনর্গঠন করে ইউরোপীয় চাহিদা মোতাবেক ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষন  আন্তর্জাতিক মানে উন্নয়ন ঘটাতে পারে, তাহলে আমরা বিশ্বাস করি ইউরোপের বর্তমান বিশাল শূন্যতা পুরণে প্রতি বছর ৪ থেকে ৫ লাখ কর্মী ইউরোপে পাঠানো সম্ভব হবে।

৮ জুলাই, ২০২৪ তারিখে ইউরোপীয় কমিশন বাংলাদেশে প্রতিভা অংশীদারিত্বের অধীনে শ্রম অভিবাসন কর্মসংস্থান বাড়ানোর এবং অভিবাসনের উপর সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে একটি নতুন কর্মসূচি উদ্বোধন করেছে। এই অংশীদারিত্ব আইনসঙ্গত শ্রম অভিবাসনের জন্য ইউরোপের প্রতি বাংলাদেশ হতে নিরাপদ, নিয়মিত এবং পারস্পরিক সুবিধাজনক দক্ষ কর্মীরদের বৈধ পথে কর্মসংস্থান তৈরি করবে যা বেআইনি অভিবাসন প্রতিরোধ ও হ্রাসে অবদান রাখবে।
“ইউরোপীয়ান-বাংলাদেশ ট্যালেন্ট পার্টনারশি“ শীর্ষক এই কর্মসূচির অধিনে তিন বছরে ৩০০০ কর্মীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে যার বাজেট ৩০ লক্ষ ইউরো এবং এটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) পরিচালনা করবে। ILO তার শ্রম বাজারের প্রবণতা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং সামাজিক সংলাপের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ব্যবহার করবে এই অংশীদারিত্ব বাস্তবায়নের জন্য, দক্ষতা গঠন এবং বাংলাদেশ ও ইউরোপ উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর উপর বাংলাদেশের শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধিতে কার্যকরি ভুমিকা রাখবে। এই কর্মসূচি শ্রম বাজারের তথ্যের অ্যাক্সেস বাড়িয়ে তুলবে, পেশাগত ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণসহ ভাষা এবং কাজের দক্ষতার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফলপ্রসূ সহায়তা প্রদান করবে এবং দক্ষতার স্বীকৃতির প্রক্রিয়া সহজতর করবে। এটি বাংলাদেশের আইনি অভিবাসন সংক্রান্ত প্রধান স্টেকহোল্ডারদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে যার মধ্যে স্থানীয় সরকার, বেসরকারি খাত এবং সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলো অন্তর্ভুক্ত।
ইউরোপীয়ান-বাংলাদেশ ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ সাধারণ চাহিদা ও যৌথ কার্যক্রম চিহ্নিত করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে এবং “ব্রেইন ড্রেন”-এর ঝুঁকিকে সকল অংশীদারের জন্য “ব্রেইন গেইন”-এ রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে কাজ করবে। এটি একটি কৌশলগত এবং দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা কাঠামো প্রদান করে যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তার সদস্য রাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জন্য শ্রম চলাচল এবং দক্ষতা উন্নয়নের জন্য সমন্বিত কর্মসূচি গঠন করতে সহায়তা করবে।

জুন ২০২১ সালে, ইউরোপীয় কমিশন দক্ষতার অভাব মোকাবেলা এবং NON EU দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ ধারণা কার্যকর করে। ইউরোপীয় কমিশন বর্তমানে মিশর, মরক্কো, পাকিস্তান ও তিউনিসিয়াসহ অন্যান্য কিছু দেশের সঙ্গে প্রতিভা অংশীদারিত্ব বিকাশ করছে। অভিবাসন ও আশ্রয়ের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ এর লক্ষ্য হলো আইনসঙ্গত পথগুলো উন্নত করা এবং অংশীদার রাষ্ট্রগুলোকে অভিবাসন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কৌশলগতভাবে যুক্ত করা। এটি হিউম্যান ট্রাফিকিং এর ট্রান্স ন্যাশনাল অপরাধ মোকাবেলা এবং অভিবাসীদের ঝুঁকি হ্রাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবেও কাজ করবে।  ৮ জুলাই, ২০২৪ তারিখে ইউরোপীয় কমিশন বাংলাদেশের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে  নতুন দিগন্তের সুচনা করেছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ:
ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ এই নতুন কর্মসূচীটি জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৭ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে এবং এতে বাংলাদেশ ও অংশগ্রহণকারী EU রাষ্ট্র গুলোর মধ্যে মোবিলিটি স্কিম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই কর্মসূচির বাস্তবায়ন সম্পর্কিত অগ্রগতি ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে আয়োজিত তৃতীয় ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ  রাউন্ডটেবিলে পর্যালোচনার জন্য অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের প্রতিভা অংশীদারিত্ব প্রকল্পটি ILO’র স্কিলস ২১ প্রকল্পের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে এবং এটি ৩,০০০ দক্ষ অভিবাসী কর্মীদের প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন এবং নিরাপদ ও নিয়মিত চলাচলের পথ তৈরি করবে। ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রতিভা অংশীদারিত্বগুলো জাতীয় গতিশীলতা বজায় রেখে কাজ করবে।

– পড়াশোনা
– কাজ
– প্রশিক্ষণ
ইউরোপে এটি কর্তৃপক্ষ, কর্মসংস্থান সংস্থা, অর্থনৈতিক অংশীদার ও শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানকারীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে অর্জিত হবে। তাছাড়া, অংশীদার দেশগুলোকে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলোতে সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য সহায়তা প্রদান করা হবেঃ
– শ্রম বাজার বা দক্ষতার তথ্য
– বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
– ফিরে আসা অভিবাসীদের সমন্বয়
– প্রবাসী সম্প্রদায়ের সংগঠন

এই অংশীদারিত্ব স্থাপন করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের লক্ষ্যগুলি উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যা বিশ্বাস গড়ে তোলা এবং অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিত ও প্রতিবেদন সহযোগিতা উন্নয়নে সহায়তা করবে।

– অভিবাসন ব্যবস্থাপনার জন্য NON EU দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগতভাবে যুক্ত হওয়া।
– পারস্পরিক সুবিধাজনক আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব তৈরি করা।
– ইউরোপ এবং অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে শ্রম ও দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা সমাধান করা।
সরকারের করনীয়:
বাংলাদেশ সরকার তার বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতির প্রয়োজনীয় সংস্কার,ইউরোপগামী কর্মীদের প্রি-ডিপারচার ওরিয়েন্টশনের আওতায় বিদেশে গিয়ে অবৈধ হওয়ার প্রবনতা রোধে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার ও মনিটরিং,যে বিদেশে যাবে নুন্যতম তিন মাস সেই দেশের ভাষা ও কারিগরী প্রশিক্ষণ গ্রহন বাধ্যতামুলক করতে হবে। প্রয়োজনীয় উদ্দ্যেগ গ্রহণ ও ব্যাপক ভাবে প্রয়োগ করলে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

অনিয়ন্ত্রিত উপায়ে ইতালীতে অভিবাসন প্রত্যাশী লাখো মানুষের স্বপ্ন ধ্বংস হতে চলেছে। আমরা আবারও দেখতে পাচ্ছি ২০২০ – ২০২৪ সালে বৈধ অনুমতি প্রাপ্ত বাংলাদেশী শ্রমিকেরা আবারো ২০০৩ – ২০১১ সালের ঘটনা পুনরাবৃত্তি করতে চলেছে। যার ফলে ৮ বছর বাংলাদেশীদের কাজের ভিসা স্থগিত ছিল।
 অন্য দিকে আমরা ইতালবাংলা সমিতির পক্ষ হতে ২০২২ সাল হতে ইতালবাংলা কর্মসংস্থান প্রকল্প নামে একটি বিশেষ কর্মসংস্থান কর্মসূচি গ্রহন করে চলমান স্পনসর সিস্টেম বিপরীতে বাংলাদেশীদের মধ্যে সচেতনা সৃষ্টি করা এবং ইতালীতে তাদের আগমন ও কর্মসংস্থানে গুনগত মানের উন্নয়ন ঘটানো লক্ষে কার্জক্রম শুরু করেছি।

ইতালী সরকার ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, যাত্রার পূর্বে পেশাদার এবং নাগরিক-ভাষা প্রশিক্ষণ এর উপর ইতালীর শ্রম ও সামাজিক নীতি মন্ত্রণালয়ের অধিনে শরনার্থী, মাইগ্রেশন ও ইন্টেগ্রেশন নীতি পরিচালনায় তহবিল Fondo Asilo Migrazione e Integrazione (FAMI), হতে ২০১৯/২০২০ সালে ১০ মিলিয়ন ইউরো ১০টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল যা ২০১৯-এর জন বিজ্ঞপ্তি নং ২-এর আওতায় প্রকল্পগুলি বাস্তবায়ন শুরু করা হয়। এই প্রকল্পগুলির লক্ষ্য বিদেশী নাগরিকদের জন্য যাত্রার পূর্বে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কিছু দিক নির্দেশনা কার্যক্রম পাইলট প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা যার লক্ষ্য ইতালিতে অভিবাসী কর্মীদের পরিবারের পুনর্মিলন ও কাজের জন্য যাত্রার পূর্বে কাজ ও ভাষা প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কর্মীদের প্রয়োজনীয় দক্ষ করে ইতালীতে যাবার সুযোগ দেয়া।
 
২৩ জানুয়ারি ২০১৯ যাত্রার পুর্বে কারিগরি, ভাষা, নাগরিক ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষন কর্মশালা সংক্রান্ত জন-বিজ্ঞপ্তিটি অধিনে দুইটি কার্যক্রমের বিবেচনায় গ্রহণ করা হয়:

পরিবারিক পুনর্মিলনের উদ্দেশ্যে ইতালিতে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের জীবনযাত্রা সহজতর করা, তাদের জন্য ভাষা প্রশিক্ষণে নাগরিক জীবনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা, যাতে তারা ইতালিতে প্রবেশের আগে গন্তব্য দেশ সম্পর্কে সাধারণ তথ্য পেতে পারে।

বিপুল দক্ষ কর্মীদের চাহিদা থাকায় বিভিন্ন পেশার নিয়েগোর জন্য পেশাদার প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা, যাতে তাদের স্বদেশে যাত্রার পূর্বে অনুষ্ঠিত কোর্স গুলির মাধ্যমে ইতালীয়ান ভাষার প্রাথমিক স্তর শেখানো, নাগরিক শিক্ষা, শ্রম স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নীতিমালার মৌলিক উপাদান গুলির শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা, যাতে করে ইতালীতে আসার পূর্বে একজন বিদেশী শ্রমিক ইতালী সম্পর্কে ধারনা নিয়ে আসতে পারেন।

 ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ যাত্রার পুর্বে কারিগরি, ভাষা, নাগরিক ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষন কর্মশালা সংক্রান্ত মোট ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। তাদের মধ্যে আটটি প্রকল্প উল্লেখিত দুটি কার্যক্রমের উপরে কাজ করেছে, বাকি দুইটি প্রজেক্ট এক নং কার্য্ক্রম তথা পরিবারিক পুনর্মিলনের উপরে ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। সামগ্রিক ভাবে, এই কার্যক্রম গুলো তৃতীয় দেশের (Non EU) নাগরিকদের ইতালিতে প্রবেশকে সহজতর করার জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত, যার মধ্যে প্রায় ৭৫% পরিবারের পুনর্মিলনের জন্য এবং বাকি ২৫% নিয়মিত কাজ বা পেশাদার প্রশিক্ষণের সুযোগের জন্য।
 তথ্য প্রচারণা পরিচালনার মাধ্যমে সমস্ত অনুদানপ্রাপ্ত প্রজেক্ট গুলো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেনেফিশিয়ারীকে তাদের জন্য Dedicated ওয়েবসাইট, স্শরীরে উপস্থিতি, জনসাধারণের জন্য সেমিনার এবং ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কভিড মহামারী সংকটের কারণে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো প্রশিক্ষণ প্রদানের পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করেছে এবং যেখানে সম্ভব সশরীরে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দূরশিক্ষণ প্রযুক্তি (FAD) Formation at Distance ব্যবহারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে, যাতে কার্যক্রমের প্রাপকদের নিরাপত্তা ও কর্তব্যের সাথে প্রশিক্ষণ প্রদানের সময়সূচী চালিয়ে যাওয়া যায়।
 যাত্রার পূর্ব প্রশিক্ষণ প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম ১৫টি ইউরোপের বাইরের দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে: আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, আইভরি কোস্ট, মিসর, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, ঘানা, ভারত, মলি, মারোকো, মল্ডোভা, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, তিউনিশিয়া এবং ইউক্রেন। এসব দেশে ইতালি শ্রম মন্ত্রনালয়ের সাথে স্বাক্ষরিত সংবিধিবদ্ধ চুক্তি কার্যকর রয়েছে যার লক্ষ্যবস্তু কাজের জন্য শ্রমিকদের মাইগ্রেশন প্রবেশের প্রবাহের নিয়ন্ত্রণ এবং সহযোগিতার। ২০২০ সালে বাংলাদেশ ইতালীর সাথে সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদন করলে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য এর সুফল পাওয়ার সুযোগ তৈরী  হয়।

বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তৃতীয় দেশের (Non EU) নাগরিকদের প্রবেশ বিধি ১৯৯৮ সালে D.Lgs 286 -এর ২৩ নম্বর ধারা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত “বিদেশি শ্রমিকদের নিজ দেশে ভাষা শিক্ষা ও পেশাদার প্রশিক্ষণ কোর্স” ধারাটি পরবর্তিতে ২০২৩ সালের Decreto-Legge 20 দ্বারা সংশোধনের মাধ্যমে ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ইতালীয় ভাষার প্রাথমিক স্তর শেখানো, নাগরিক শিক্ষা, শ্রম স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নীতিমালার মৌলিক উপাদানগুলির শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়- এর মাধ্যমে ইতালীর শ্রম ও সামাজিকে ইন্টেগ্রেশন নীতির অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজতর করা হয়।
 
বাংলা ড্রিম বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ গ্রহন করা হয় ২০২২ সালে ইতালবাংলা সমিতি ও বাংলাদেশের প্রবাসী উন্নয়ন সমিতির সাথে যৌথ উদ্দ্যেগে ইতালীয়ান ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইতালবাংলা গ্রীনল্যান্ড এইচআরডি লি: সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে ইতালীয়ান বিশ্ববিদ্যালয় সিয়েনার অনুমোদন এর মাধ্যমে ঢাকায় ইতালীয়ান ভাষা শিক্ষা ও সার্টিফিকেট প্রদানের সুযোগ সহজতর করা হয়। ২০২৪ সালে ৭ই মার্চ ঢাকায় গ্রীনল্যান্ড টাওয়ারে বাংলাদেশে প্রথম ইতালীয়ান ভাষার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ইতালীয়ান ভাষা পরীক্ষা কার্জক্রম চলমান আছে।
 
ইতালবাংলা সমিতির দীর্ঘ অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফসল হিসাবে ২৮/০২/২০২৪ তারিখে কারিগরি প্রশিক্ষণ অংশিদার FORMAT, University SIENA, Work Agency, Italbangla  Greenland HRD Ltd ও Italian Embassy Dhaka এর যৌথ অংশিদারিত্বে এবং ইতালিয়ান শ্রম মন্ত্রনালয় ও পররাস্ট্র মন্ত্রনালয়ের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশে প্রথম “ইউরোপীয়ান-বাংলাদেশ ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ” পাইলট প্রজেক্ট PRE-DEPARTURE PROFESSIONAL AND LINGUISTIC TRAINING PROGRAM যাত্রার পূর্বে ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান প্রকল্প বাংলা ড্রিম প্রকল্পের মাধ্যমে স্বপ্ন যাত্রা শুরু ।
 
২০২৪ সালে মার্চ মাসে BANGLA DREAM PILOT PROJECT এর মাধ্যমে ১০০ জন কর্মী প্রশিক্ষণ  কার্যক্রম শুরু হয় এবং জুলাই মাসে ১০ জন গার্মেন্টস শ্রমিক তাদের প্রশিক্ষণ শেষ করে। সেপ্টেম্বর মাসে ১০ জনের ওয়ার্ক পারিমিট পাওয়া যায়। অক্টোবর মাসে তাদের ভিসা কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। ১৭ই অক্টোবর ও ৮ই  নভেম্বরে ২০২৪ যথাক্রমে ১০জন কর্মী  ইতালীতে সফল ভাবে তাদের কর্মস্থলে যোগ দান করে।
 
BANGLA DREAM PROJECT বর্তমানে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং আশা করা যায় আগামী ফেব্রুয়ারী ২০২৫ সালের মধ্যে এর প্রশিক্ষণ শেষ করে সর্বমোট ৯০ জন কর্মীকে তাদের প্রয়োজনী ইতালীয়ান ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে সবাইকে ইতালীতে জব প্লেসমেন্টে পাঠানো সম্ভব হবে।
 
BANGLA DREAM PROJECT চলমান অবস্থায় গত ২৮শে অক্টোবর দ্বিতীয় প্রকল্প BANGLA LUX PROJECT এর আওতায় ৬০ জন ইলেক্ট্রিশিয়ান এর অনুমোদন পাওয়া গেছে যার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করা যায় আগামী ২০২৫ সালের জুন/জুলাই মাসে BANGLA LUX PROJECT এর কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
 
ইতালবাংলা সমিতির BANGLA DREAM ও BANGLA LUX এই দুইট প্রকল্পটি ইউরোপিয়ান আইনের অধিনে অনুমোদিত এবং ইউরোপীয়ান-বাংলাদেশ ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রকল্পের একটি অগ্রগামী পাইলট প্রজেক্ট।
Guidelines on Professional and Civic-Linguistic Training Programs Abroad:
Italian Labour Ministry Approved Training Abroad Programs:
প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের সুদৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়া গেলে ইউরোপীয়ান-বাংলাদেশ ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ এর অধিনে ইউরোপে পরিকল্পিত উপায়ে কর্ম সংস্থানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। যেখানে লাখো তরুণের প্রতিভার বিকাশের সুযোগ তৈরী হবে।

শাহ মোহাম্মদ তাইফুর রহমান
সভাপতি
ইতালবাংলা সমন্বয় ও উন্নয়ন সমিতি
Associazione Coordinamento Italbangla e Sviluppo,
Office (RM) Via di Torpignattara 110-11  CAP 00177, Numero REA REA RM – 1637665, Codice fiscale 16149101004, Email : info@italbangla.net
Email : Info@italbangla.net